সনু সুদ জন্মগ্রহণ করেন হাজার 1973 সালের 10 ই জুলাই পাঞ্জাবের মোগাতে, একটা আপার মিডিল ক্লাস ফ্যামিলিতে। বাবা শক্তি সাগর একজন ব্যবসায়ী এবং মা সরস্বতী একজন প্রফেসর । সনু ছিলেন একাধারে মডেল, অভিনেতা, প্রযোজক যিনি হিন্দি, তেলেগু, তামিল, কান্নার এবং পাঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে এছাড়াও সবথেকে বড় পরিচয় হলো তিনি একজন মানবতাবাদী । Covid 19 মহামারীর সময় মানবসেবায় তার অসামান্য অবদানের জন্য সারা ভারতের মানুষের কাছে তিনি বর্তমানে একজন রিয়েল হিরো নামে পরিচিত।
পাঞ্জাবের মোগাতে স্যাক্রড হার্ট স্কুল লেখা পড়ার পর সনু তার বাবার ব্যবসাতে যোগ দেন। তিনি ভেবেছিলেন জীবনে বড় ব্যবসায়ী হবেন। কিন্তু তাঁর মা যেহুতু একজন শিক্ষিক, তাই তিনি চেয়েছিলেন সনু আরো লেখাপড়া করুক । তাই সনু নাগপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন করার জন্য । সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় মডেলিং করতে শুরু করেন । মডেলিং থেকেই ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি আকর্ষিত হন। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর অভিনয় জীবন শুরু করার আশায় হাতে মাত্র 5 হাজার 500 টাকা নিয়ে মুম্বাইতে চলে আসেন। থাকতে শুরু করেন একটি মেস বাড়িতে, এক কামরার ঘরে আরো ছয় বন্ধুর সঙ্গে। সিনেমায় সুযোগের আশায় পরিচালক এবং প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। এ সময় নিজের খরচ চালানোর জন্য কাজ নেন একটি বেসরকারি ফার্মে, বেতন ছিল মাত্র 4500 টাকা । সনু এসময় মিস্টার ইন্ডিয়া কনটেস্টে যোগ দেন এবং টপ ফাইভ থেকে বাদ পড়েন । অবশেষে 1999 সালে আসে সেই আকাঙ্খিত মুহূর্ত যখন সাউথের ফিল্ম ডিরেক্টরকে অনুরোধ এর মাধ্যমে অভিনয়ের সুযোগ পান তামিল ফিল্ম-এ ।
তারপর একে একে করতে থাকেন তেলেগু, তামিল, কন্নড় প্রভৃতি ভাষার ছবি। হিন্দি ছবিতে অভিনয় শুরু করেছিলেন 2002 সালে শহীদ ভগৎ সিং সিনেমার মাধ্যমে। 2004 সালে করেন মনিরত্নমের যুবা এবং 2005 সালে আশিক বানায়া আপনে । তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এবং একে একে তিনি অভিনয় করেন দাবাং, হ্যাপি নিউ ইয়ার, গব্বর ইজ ব্যাক প্রভৃতি সুপারহিট সিনেমাতে।
অভিনয়ের জোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন হলিউড এবং চাইনিজ সিনেমাতেও । জ্যাকি চ্যানের সঙ্গেও তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্মে অভিনয় সুযোগ পান এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করেন । ভারতবর্ষে মানুষের কাছে যে শুধু তার অভিনয় প্রতিভার জন্য স্মরণীয় তা নয় । লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ধীরে ধীরে গরিব মানুষদের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন । তার কাছে সাহায্য চেয়ে ফিরতে হয়েছে এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছেন।
গোটা দেশবাসীর কাছে তিনি এখন বর্তমানে সুপারহিরো অভিনেতা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন বিরাট মনের মানুষের । 2020 সালের মে মাসে Covid 19 মহামারীর কারণে দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন কয়েক হাজার আটকে পড়া প্রবাসী শ্রমিককে বাস, ট্রেন এবং চার্টাড ফ্লাইট এর ব্যবস্থা করে দেন তাদের ঘরে পৌঁছানোর জন্য। 2020 সালের জুলাইয়ে তিনি কিরগিস্থানে আটকে পড়ে থাকা 1500 এর বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থীকে দেশে আনার জন্য একটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছিলেন । তাদেরকে বিশকেক থেকে বারাণসীতে উড়িয়ে আনা হয়েছিল।
মহামারী চলাকালীন তার দান এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা ভারতবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তিনি ভারতবাসীর কাছে একজন বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। 2020 সালের 25 শে জুলাই একজন কৃষকের কন্যা কাঁধে জোয়াল নিয়ে ষাঁড়ের মতো একটি জমি চাষ করার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং সনু সুদ এর কাছে পৌঁছায়। এইদৃশ্য সোনুকে গভীরভাবে মর্মাহত করে এবং দ্রুত পরিবারকে একটি ট্রাক্টর কিনে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি 2020 সালের 5 ই আগস্ট তামিলনাড়ুর 111 জন মেডিকেল ছাত্রকে সহায়তা করেছিলেন যারা লকডাউন এর সময় মস্কোতে আটকা পড়েছিল । ছাত্র ছাত্রীরা সনুর টিমের সঙ্গে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করে, সনু তৎক্ষণাৎ একটি চার্টাড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে এবং তাদের নিরাপদে ভারতে ফিরিয়ে আনেন।
সনু নিজের জন্মদিনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিরাট পার্টি সেলিব্রেশন না করে ভারতের প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি ওয়েবসাইট এবং একটি অ্যাপস তৈরি করেন যার মাধ্যমে লকডাউনে কাজ হারানো মানুষরা নতুন কাজের সন্ধান পাবে। শুধু তাই নয় দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যের জন্য নিজের সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে । মুম্বাইয়ের জুহুতে মোট আটটি সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে । ইসকন মন্দিরের কাছে এবি নায়ার রোডে অবস্থিত জুহুর শিব সাগর CGHS-এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে দুটি দোকান এবং ছয়টি ফ্লোরের ছয়খানি ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে 10 কোটি টাকা তুলেছিলেন গরীবদেরকে সাহায্য করার জন্য।
2020 সালের সেপ্টেম্বরে Covid 19 চলাকালীন মানবিক কাজের জন্য ভারতীয় হিসেবে বিরল ইউনাইটেড নেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) পুরস্কার পেয়েছিলেন এই মহান অভিনেতা সনু সুদ।