শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগর:
ভূমিকা : ইউরোপীয় ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে বিদ্যাসাগর জনকল্যাণের জন্য শিক্ষাবিস্তার ঘটান। সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত হলেও তিনি এদেশে শিক্ষাসংস্কারের জন্য ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।
শিক্ষা প্রশাসন ও বিদ্যাসাগর : আধুনিক ভারত গঠনে বিদ্যাসাগরের অবদান বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি সংস্কৃত কলেজে থাকাকালীন শিক্ষা ও শিক্ষালয় সংক্রান্ত একাধিক সংস্কারকর্মের সূচনা করেন। তিনি পাঠ্যক্রম রচনায় মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দেন। তিনি এই প্রথম বাংলার মাধ্যমে সংস্কৃত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। এজন্য তিনি নিজে সংস্কৃত ব্যাকরণের ‘উপক্রমণিকা’ ও ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রাচীন ভারতীয় গণিত বিষয়ক গ্রন্থগুলিকে বর্জন করে, ইংরেজি ভাষায় লেখা গণিত বিষয়ক গ্রন্থগুলি পাঠের ওপর জোর দেন। তিনি ইংরেজি ভাষাকে অবশ্য পাঠ্য বিষয়ের তালিকাভুক্ত করেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বিদ্যাসাগর ঃ বিদ্যাসাগর জনশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য নিয়ে একাধিক বাংলা গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে ‘বর্ণমালা’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে দুটি ভাগে ‘বর্ণ পরিচয়’ নামে যে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছিলেন, তা আজও প্রচলিত। ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা বর্ণমালার পুনর্বিন্যাস ঘটান ও বাংলা ভাষায় যতিচিহ্ন ব্যবহার করে, তার আধুনিকীকরণ করেন। তবে বিদ্যাসাগরের বিপুল সাহিত্যসম্ভারের অধিকাংশই অনুবাদ কর্ম ও শিক্ষা-সাহিত্য।
শিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগর : জনশিক্ষা বিস্তারের কাজে বিদ্যাসাগরের উৎসাহ ছিল। সেটা লক্ষ করে বাংলার ছোটোলাট ফ্রেডারিক হ্যালিডে তাঁকে বর্ধমান, হুগলি, নদীয়া ও মেদিনীপুর জেলায় আদর্শ বাংলা বিদ্যালয় বা মডেল স্কুল স্থাপন করার দায়িত্ব দেন। বিদ্যাসাগর ‘ইনস্পেকটর অফ স্কুল’ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় প্রায় ২০টি মডেল স্কুল স্থাপন করেন। এইসব স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘নর্ম্যাল স্কুল’ও স্থাপন করা হয়। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি পরে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কলেজে পরিণত হয়। এই কলেজটি পরে ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’ নামে পরিচিত হয়।
নারীশিক্ষা ও বিদ্যাসাগর : উপরোক্ত চারটি জেলায় বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যেগুলিতে প্রায় ১৩০০ জন বালিকা পড়াশোনা করত। ব্রিটিশ সরকারের‘কাউন্সিল অব এডুকেশন’-এর সভাপতি জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (পরে বেথুন স্কুল) নামে কলকাতায় যে নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী। বিদ্যাসাগর দীর্ঘকাল এই বিদ্যালয়ের সচিব ছিলেন।
- উপসংহার : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলারনবজাগরণের এক উজ্জ্বল পথিকৃৎ। শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি যে সংস্কারের প্রয়োগ ঘটান তা আজও সমাদৃত হয়।
Check Also:
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ইতিহাস আলোচনা কর।