মাদার টেরিজা অনুচ্ছেদ রচনা
অ্যালবিনিয় ভাষায় গােনক্সহা শব্দটির অর্থ গােলাপ কুঁড়ি। সবচেয়ে ছােট মেয়েটি জন্মানাের পর তার তুলতুলে সুন্দর মুখটা দেখে বাবা নাম রাখলেন গােনক্সহা। পুরাে নাম অ্যাগনেস গােনত্মহা বােজাক্সহিউ। অ্যালবিনিয় এই পরিবারটি গোড়া রােমান ক্যাথােলিক। বর্তমান ম্যাসিডােনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী স্কোপজতে থাকত পরিবারটি। পরিবারের কর্তা ব্যবসায়ী। মা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা। সময় পেলেই চলে যান গির্জায়। যতটুকু পারেন গরিবদের করেন সাহায্য। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে ছােট অ্যাগনেস সব সময়ই যেত তার সঙ্গে। ভারি সুন্দর আর নরম মনের মেয়ে অ্যাগনেস মাত্র ১২ বছর বয়সেই যেন শুনতে পায় অন্তরের ডাক। ঠিক করে সে হবে সন্ন্যাসিনী। শুনে মা বলেন, আগে পড়াশােনা শেষ করাে, তারপর যেও তােমার পথে।
১৮ বছর বয়সে অ্যাগনেসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর নয়, এবার বরণ করতে হবে অন্যজীবন। তার সিদ্ধান্ত, তিনি কাজ করবেন গরিবদের মধ্যে।সেবা করবেন তাদের। অ্যাগনেসের জন্মের আট বছর আগে মারা গেছেন স্বামী বিবেকানন্দ তারও কয়েক বছর আগে তিনি বলেছিলেন, এবার কেন্দ্র ভারতবর্ষ। ভারতে বিশেষ করে বঙ্গদেশে মিশনারিদের সেবা-কাহিনি পড়ে অ্যাগনেসও ভারতকেই তার কাজের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেবার কথা ভাবেন। সেই মতাে ১৯২৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে অ্যাগনেস যান আয়ারল্যান্ডে। ইন্সটিটিউট অব ব্লেসড় ভার্জিন মেরি-তে। পরের বছর তাকে পাঠানাে হয়। কলকাতার সেন্ট মেরিজ কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে। শিখে নেন বাংলা। ১৯৩১-এর ২৪ মে তিনি প্রথম ধর্মীয় শপথ নেন। নাম নেন টেরিজা।
১৯৪৭-এ দার্জিলিং যাওয়ার সময় শােনেন দৈৰী আহ্বান। সব কিছু ছেড়ে বস্তিতে গরিব মানুষদের মধ্যে কাজ করার শপথ নেন। তারজন্য পাটনায় গিয়ে নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ নেন। গরিবদের মধ্যে কাজ করার জন্য অনুমতি নেন পােপ ত্রয়ােদশ পায়াসের। ১৯৪৪ সালেই তিনি হয়েছিলেন এন্টালির লরেটো কনভেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এবার সব ছেড়ে একবারে কপর্দক শূন্য অবস্থায় শুরু হল আরেক জীবন। ১৯৪৮-এ মতিঝিল বস্তিতে গড়লেন স্কুল। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভিভাবকদেরও করতে থাকেন স্বাস্থ্য সচেতন। দিতে থাকেন ছেলেমেয়েদের দুপুরের খাবার আর দুধ। ১৯৫০-এ কালীঘাট মন্দিরের কাছে পুরধর্মশালাটি তার হাতে তুলে দেন পুরকর্তৃপক্ষ। শুরু হয় মিশনারি অব চ্যারিটিজের যাত্রা।
মিশনারি অব চ্যারিটিজ গড়ে তুলতে থাকে গরিবদের জন্য বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অন্ধ, বৃদ্ধ, কুষ্ট রােগীদের জন্য আবাস এবং চিকিৎসা কেন্দ্র। মৃত্যু পথযাত্রীদের জন্য তৈরি করেন নির্মল হৃদয়, মানসিক দিক থেকে অসুস্থ শিশুদের জন্য শিশুভবন’, আসানসােলের কাছে। কুষ্ঠ রােগীদের জন্য উপনিবেশ শান্তি নগর। দরিদ্র, অবহেলিত সব ধর্মের মানুষের কাছে তার পরিচয় হয় একটিই— মা-মাদার টেরিজা | তার বিরাট কর্মকাণ্ডের জন্য দেশ বিদেশের মানুষ আকৃষ্ট হতে থাকেন তার প্রতি। সাহায্যের জন্য আসে অর্থ। ভূষিত হন নানা সম্মানে। ১৯৬২ সালে প্রথম খেতাব পদ্মশ্রী। ওই বছরেই পান ম্যাগসাই সাই পুরস্কার। ১৯৭২-এ আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য জওহরলাল নেহরু পুরস্কার। ১৯৭৯ সালে পান নােবল শান্তি পুরস্কার। ১৯৮০ সালে তিনি হন ভারতরত্ন’। এই প্রথম জন্মসূত্রে বিদেশি কিন্তু এক ভারতীয় নাগরিক পেলেন এই পুরস্কার। সেবাব্রতী মাদার টেরিজা শুধু ভারত নয় সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষের মা হিসেবে হন সকলের নমস্যা।।
এছাড়াও পড়ুনঃ
এ. পি. জে আব্দুল কালাম(A.P.J Abdul Kalam)। বাংলা প্রবন্ধ